বর্ধমানের অনাময় সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল থেকে শিশু চুরি , তদন্তে পুলিশ

19th January 2020 বর্ধমান
বর্ধমানের অনাময় সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল থেকে শিশু চুরি , তদন্তে পুলিশ



    

মাতৃত্ব  জনিত সরকারী অনুদান পাইয়ে দেবার 
টোপ দিয়ে এক প্রসুতির কোল থেকে সদ্য ভূমিষ্ট কণ্যা সন্তানকে পালালো এক মহিলা । চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি রবিবার ঘটেছে বর্ধমানের অনাময় সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে । এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ফের  প্রশ্নের মুখে সরকারী  হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা । 


পুলিশ সূত্রে জানাগেছে প্রসুুতি রীমা মালিকের  বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের রায়নার সিপটা গ্রামের উত্তর পাড়ায় । প্রসব যন্ত্রনা নিয়ে  রীমা গত বৃহঃস্পতিবার বর্ধমান মেডিকেল কলেজ ও   হাসপাতালে ভর্তি হন। পরদিন  শুক্রবার  বিকালে তিনি  একটি  কন্যা সন্তানের জন্ম দেন।তিন কেজি ওজনের  কণ্যা সন্তান ও প্রসুুতির  শারীরিক অবস্থা ভালো থাকার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁদের বরিবার সাকালে ছুটি দিয়েদেন । এরপর ডাক্তারি কাগজপত্র ও সদ্য ভূমিষ্ট কণ্যাসন্তানকে  সঙ্গে নিয়ে রীমা ও তাঁর স্বামী সন্দীপ মালিক  হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগ থেকে বেরিয়ে  পড়েন । রাধারানী ওয়ার্ডের সামনের বিশ্রামাগারে সন্তানকে  কোলে নিয়ে বসেন রীমা ।  আর তাঁর স্বামী সন্দীপ ওষুধ কিনতে যান।ওষুধ কেনার পর  তাঁদের রায়নার বাড়িতে পৌছে দেবার জন্য সেখানেই তখন দাঁড়িয়েছিল নিখরচার   সরকারী গাড়িও । ওই সময়েই প্রশুতি ও তাঁর পরিবার অজ্ঞাত পরিচয় এক মহিলার খপ্পরে পড়েন । 


প্রশুতি রীমা  মালিক জানিয়েছেন, রাধারানী ওয়ার্ডের  সামনের বিশ্রামাগারে যখন সন্তানকে বসেছিলেন তখনই মাঝবয়সী এক মহিলা তাঁদের কাছে এসে যেচে  কথা বলা শুরু করে। নিজেকে আশা কর্মী বলে পরিচয় দিয়ে ওই মহিলা  জানায় তার নাম রিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়।  এরপর পরেই ওই মহিলা তাঁদের কাছে জানতে  চায়  শিশুর জন্মের পর সরকারী ছয় হাজার টাকা আমরা পেয়েছি কিনা । রীমা বলেন , কোন টাকা না পাবার কথা ওই মহিলাকে তাঁরা জানান ।একথা শোনার পরেই ওই মহিলা  মাতৃত্ব জনিত সরকারী টাকা পাইয়ে দেবার ব্যবস্থা তাঁদের  করেদেবেন বলে জানান ।  রীমা ও তাঁর স্বামী সন্দীপ বলেন ,  টাকা পাইয়ে দেবার ব্যবস্থা করেদেবেন বলে জানিয়ে  ওই মহিলা তাঁদের  বর্ধমান হাসপাতাল থেকে অনাময় হাসপাতালে যাবার পরামর্শ দেন । রীমা বলেন সরল বিশ্বাসে তিনি, তাঁর মা রেনুকা বাগ এবং স্বামী সন্দীপ সরকারী গাড়ি ছেড়েদিয়ে টোটো ভাড়া করে  ওই  মহিলার সঙ্গে অনাময় হাহপাতালে যান । বেলা  ১১.১০ মিনিট নাগাদ  তাঁরা অনাময় হাসপাতালে পৌছান । ওই মহিলা অনাময় হাসপাতালের ভিতরের  একটি জায়গায়  নিয়েগিয়ে তাঁদের বসান । ওই মহিলা প্রসূতি রীমাদেবীকে  সেখানে বাথরুম করাতেও নিয়ে যান। সেখান থেকে ফিরে এসে ওই মহিলা শিশুটির বাবা সন্দীপ মালিককে অনাময় হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায়  নিয়ে গিয়েএকটি ঘরের সামনে দাঁড়াতে বলেন ।  ওই মহিলা সন্দীপ কে বলেন , ‘এখানে দাঁড়াও  ।  এখানেই তোমার  স্ত্রীর নাম ডেকে তাঁকে টাকা দেওয়া হবে । ’  সন্দীপ কে সেখানে দাঁড় করিয়ে রেখে ওই মহিলা প্রশুতি রীমার কাছে চলে আসেন । রীমাকে ওই মহিলা বলেন তোমার  শিশু কন্যার ওজন করাতে হবে । রীমার   কাছ থেকে শিশুকন্যাকে নিয়ে ওই মহিলা ফের উপরের তলায় যায় । সেখানে গিয়ে শিশুটির বাবা সন্দীপ কে হাসপাতালের কাগজপাতি  রেডি করার কথা বলে মহিলা শিশুটিকে নিয়ে রীমার  কাছে আসে  ।শিশুটিকে মায়ের দুধ খাওয়ায়। এরপরেই শিশুটিকে ওজন করাতে নিয়েযাবার  কথা বলে ওই মহিলা  বেলা ১২টার পর  হাসপাতাল থেকে গায়েব হয়েযান । দীর্ঘ সময় পেরিয়ে যাবার পরেও শিশুকন্যাকে নিয়ে ওই মহিলা ফিরে না আসায়  রীমা তাঁর স্বামীকে ফোন করেন । সন্দীপ ও  রীমাকে জানায় , ওই মহিলা তাকেও উপরেতলার একটি ঘরের সামনে  দাঁড়াতে বলে  আর ফেরেনি। আশাকর্মী পরিচয় দেওয়া ওই মহিলা শিশুকন্যাকে চুরি করে নিয়ে পালিয়েছে বুঝতে পারার পরেই প্রশুতি ও তাঁর পরিবারের সবাই ওই মহিলার খোঁজ  শুরু করেন । 


এই ঘটনা জানার পর অনাময় হাসপাতালের ডেপুটি সুপার অমিতাভ  সাহা সহ  কর্তৃপক্ষও নড়ে চড়ে বসেন । কর্তৃপক্ষ  অনাময় হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে  দেখেন বেলা  ১২ টা ৫৯ মিনিট নাগাদ ওই মহিলা শিশুটিকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে  হেঁটে বেরিয়ে বর্ধমানের উল্লাসের দিকে  চলে যাচ্ছে ।খবর পেয়ে বর্ধমান  থানার পুলিশও অনাময় হাসপাতালে পৌছায় । পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে  শিশু চুরির ঘটনার  তদন্ত শুরু করেছে।জেলা পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন , ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে । সিসিটিভি ফুটেজে  দেখতে পাওয়া যাওয়া ওই মহিলার খোঁজ চালানো হচ্ছে ।

ছবি - সিসি ক‍্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখছেন ডেপুটি সুপার ডাঃ অমিতাভ সাহা





Others News

MEMARI . একবছর আগে আবেদন করেও মেলেনি জাতিগত শংসাপত্র : হন‍্যে হয়ে ঘুরছেন মা

MEMARI . একবছর আগে আবেদন করেও মেলেনি জাতিগত শংসাপত্র : হন‍্যে হয়ে ঘুরছেন মা


প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় ( বর্ধমান ) : প্রায় এক বছর আগে আবেদন করেও মেয়ের জাতিগত শংসাপত্র মেলেনি । আবেদনকারীদের জাতি শংসাপত্র দেওয়ার
ক্ষেত্রে দেরি করা যাবেনা বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।কিন্তু বাস্তবে ঠিক তার উল্টোটাই ঘটে চলেছে।প্রায় এক বছর আগে  চতুর্থ শ্রেণীতে পাঠরত মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে  আবেদন করেছিলেন মা।কিন্তু মেয়ে কে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তির সময় এগিয়ে আসলেও জাতি  শংসাপত্র আজও না মেলায় কার্যত হতাশ হয়ে পড়েছেন পূর্ব বর্ধমানের মেমারির রাধাকান্তপুর নিবাসী ঊর্মিলা দাস।ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য ঊর্মিলাদেবী বৃহস্পতি বার মেমারি ১ ব্লক বিডিও অফিসে লিখিত ভাবে আবেদন জানিয়েছেন। শংসাপত্র পাবার জন্য বিডিও সাহেব কি ব্যবস্থা করেন সেদিকেই এখন তাকিয়ে ঊর্মিলাদেবী। 

বিডিওকে লিখিত আবেদনে ঊর্মিলাদেবী জানিয়েছেন ,তাঁর স্বামী মানিক দাস দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধী ।বছর ১০ বয়সী তাঁদের একমাত্র কন্যা গ্রামের বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণীতে পাঠরত কালে তাঁর ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য তিনি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারী আবেদন করেছিলেন।  উর্মিলাদেবী বলেন ,তার পর থেকে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে  গেলেও তিনি তাঁর মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পান না।মেয়ের পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তির সময় এগিয়ে আসায় গত অক্টোবর মাসের শেষের দিকে তিনি শংসাপত্রের বিষয়ে মেমারি ১ ব্লকের বিডিও অফিসে খোঁজ নিতে যান।জাতি শংসাপত্র বিষয়ের বায়িত্বে থাকা বিডিও অফিসের আধিকারিক তাঁকে অনলাইনে এই সংক্রান্ত একটি নথি বের করে আনতে বলেন । অনলাইনে সেই নথি বের করেনিয়ে তিনি ফের ওই আধিকারিকের কাছে যান । তা দেখার পর ওই আধিকারিক তাঁকে  ২০ দিন বাদে আসতে বলেন । ঊর্মিলাদেবী বলেন , তিনি ২৫ দিন বাদে যাবার পর ওই আধিকারিক তাঁকে গোপগন্তার ২ গ্রাম পঞ্চায়েতে গিয়ে খোঁজ নেবার কথা বলেন । তিনি এরপর গ্রামপঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে যান । নথি ঘেঁটে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয় তাঁর মেয়ের নামে কোন ওবিসি শংসাপত্র পঞ্চায়েতে আসে নি।ঊর্মিলাদেবী দাবী করেন ,এই ভাবে তিনি একবার বিডিও অফিস , আবার পঞ্চায়েত অফিসে দরবার করে চলেন । কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছু হয় না। মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য  গত ১৩ ডিসেম্বর ফের তিনি বিডিও অফিসে যান ।ওই দিনও বিডিও অফিসের জাতি শংসাপত্র বিষয়ক বিভাগের আধিকারিক তাঁকে একই ভাবে পঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে যেতে বলে দায় সারেন। পরদিন তিনি পঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে গেলে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ ফের জানিয়ে দেয় তাঁর মেয়ের নামে  ওবিসি শংসাপত্র পঞ্চায়েতে আসে নি । কেন মেয়ের জাতি শংসাপত্র পাচ্ছেন না সেই বিষয়ে  না পঞ্চায়েত না ব্লক প্রশাসনের কর্তৃপক্ষ কেউই তাঁকে কিছু জানাতে পারেন । ঊর্মিলাদেবী বলেন ,পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তির আগে তার মেয়ে যাতে ওবিসি শংসাপত্র পেয়ে যায় তার ব্যবস্থা করার জন্য এদিন তিনি বিডিওর কাছে লিখিত ভাবে আবেদন জানিয়েছেন । মেমারী ১ ব্লকের বিডিও আলী মহম্মদ ওলি উল্লাহ এদিন বলেন ,“জাতি শংসাপত্র পাবার জন্য হাজার হাজার আবেদন জমা পড়ছে । তবে ঊর্মিলাদেবীর কন্যা দ্রুত যাতে বিবিসি শংসাপত্র দ্রুথ পান সেই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে “। মেমারির বিধায়ক মধুসূদন ভট্টাচার্য্য বলেন,’মেমারি  বিধানসভা এলাকার আবেদনকারীরা দ্রুত যাতে জাতি শংসাপত্র পান সেই বিষয়ে প্রশাসনকে আরও তৎপর হওয়ার কথা বলবো’।