মাতৃত্ব জনিত সরকারী অনুদান পাইয়ে দেবার
টোপ দিয়ে এক প্রসুতির কোল থেকে সদ্য ভূমিষ্ট কণ্যা সন্তানকে পালালো এক মহিলা । চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি রবিবার ঘটেছে বর্ধমানের অনাময় সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে । এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ফের প্রশ্নের মুখে সরকারী হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ।
পুলিশ সূত্রে জানাগেছে প্রসুুতি রীমা মালিকের বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের রায়নার সিপটা গ্রামের উত্তর পাড়ায় । প্রসব যন্ত্রনা নিয়ে রীমা গত বৃহঃস্পতিবার বর্ধমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি হন। পরদিন শুক্রবার বিকালে তিনি একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন।তিন কেজি ওজনের কণ্যা সন্তান ও প্রসুুতির শারীরিক অবস্থা ভালো থাকার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁদের বরিবার সাকালে ছুটি দিয়েদেন । এরপর ডাক্তারি কাগজপত্র ও সদ্য ভূমিষ্ট কণ্যাসন্তানকে সঙ্গে নিয়ে রীমা ও তাঁর স্বামী সন্দীপ মালিক হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগ থেকে বেরিয়ে পড়েন । রাধারানী ওয়ার্ডের সামনের বিশ্রামাগারে সন্তানকে কোলে নিয়ে বসেন রীমা । আর তাঁর স্বামী সন্দীপ ওষুধ কিনতে যান।ওষুধ কেনার পর তাঁদের রায়নার বাড়িতে পৌছে দেবার জন্য সেখানেই তখন দাঁড়িয়েছিল নিখরচার সরকারী গাড়িও । ওই সময়েই প্রশুতি ও তাঁর পরিবার অজ্ঞাত পরিচয় এক মহিলার খপ্পরে পড়েন ।
প্রশুতি রীমা মালিক জানিয়েছেন, রাধারানী ওয়ার্ডের সামনের বিশ্রামাগারে যখন সন্তানকে বসেছিলেন তখনই মাঝবয়সী এক মহিলা তাঁদের কাছে এসে যেচে কথা বলা শুরু করে। নিজেকে আশা কর্মী বলে পরিচয় দিয়ে ওই মহিলা জানায় তার নাম রিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর পরেই ওই মহিলা তাঁদের কাছে জানতে চায় শিশুর জন্মের পর সরকারী ছয় হাজার টাকা আমরা পেয়েছি কিনা । রীমা বলেন , কোন টাকা না পাবার কথা ওই মহিলাকে তাঁরা জানান ।একথা শোনার পরেই ওই মহিলা মাতৃত্ব জনিত সরকারী টাকা পাইয়ে দেবার ব্যবস্থা তাঁদের করেদেবেন বলে জানান । রীমা ও তাঁর স্বামী সন্দীপ বলেন , টাকা পাইয়ে দেবার ব্যবস্থা করেদেবেন বলে জানিয়ে ওই মহিলা তাঁদের বর্ধমান হাসপাতাল থেকে অনাময় হাসপাতালে যাবার পরামর্শ দেন । রীমা বলেন সরল বিশ্বাসে তিনি, তাঁর মা রেনুকা বাগ এবং স্বামী সন্দীপ সরকারী গাড়ি ছেড়েদিয়ে টোটো ভাড়া করে ওই মহিলার সঙ্গে অনাময় হাহপাতালে যান । বেলা ১১.১০ মিনিট নাগাদ তাঁরা অনাময় হাসপাতালে পৌছান । ওই মহিলা অনাময় হাসপাতালের ভিতরের একটি জায়গায় নিয়েগিয়ে তাঁদের বসান । ওই মহিলা প্রসূতি রীমাদেবীকে সেখানে বাথরুম করাতেও নিয়ে যান। সেখান থেকে ফিরে এসে ওই মহিলা শিশুটির বাবা সন্দীপ মালিককে অনাময় হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় নিয়ে গিয়েএকটি ঘরের সামনে দাঁড়াতে বলেন । ওই মহিলা সন্দীপ কে বলেন , ‘এখানে দাঁড়াও । এখানেই তোমার স্ত্রীর নাম ডেকে তাঁকে টাকা দেওয়া হবে । ’ সন্দীপ কে সেখানে দাঁড় করিয়ে রেখে ওই মহিলা প্রশুতি রীমার কাছে চলে আসেন । রীমাকে ওই মহিলা বলেন তোমার শিশু কন্যার ওজন করাতে হবে । রীমার কাছ থেকে শিশুকন্যাকে নিয়ে ওই মহিলা ফের উপরের তলায় যায় । সেখানে গিয়ে শিশুটির বাবা সন্দীপ কে হাসপাতালের কাগজপাতি রেডি করার কথা বলে মহিলা শিশুটিকে নিয়ে রীমার কাছে আসে ।শিশুটিকে মায়ের দুধ খাওয়ায়। এরপরেই শিশুটিকে ওজন করাতে নিয়েযাবার কথা বলে ওই মহিলা বেলা ১২টার পর হাসপাতাল থেকে গায়েব হয়েযান । দীর্ঘ সময় পেরিয়ে যাবার পরেও শিশুকন্যাকে নিয়ে ওই মহিলা ফিরে না আসায় রীমা তাঁর স্বামীকে ফোন করেন । সন্দীপ ও রীমাকে জানায় , ওই মহিলা তাকেও উপরেতলার একটি ঘরের সামনে দাঁড়াতে বলে আর ফেরেনি। আশাকর্মী পরিচয় দেওয়া ওই মহিলা শিশুকন্যাকে চুরি করে নিয়ে পালিয়েছে বুঝতে পারার পরেই প্রশুতি ও তাঁর পরিবারের সবাই ওই মহিলার খোঁজ শুরু করেন ।
এই ঘটনা জানার পর অনাময় হাসপাতালের ডেপুটি সুপার অমিতাভ সাহা সহ কর্তৃপক্ষও নড়ে চড়ে বসেন । কর্তৃপক্ষ অনাময় হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখেন বেলা ১২ টা ৫৯ মিনিট নাগাদ ওই মহিলা শিশুটিকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে হেঁটে বেরিয়ে বর্ধমানের উল্লাসের দিকে চলে যাচ্ছে ।খবর পেয়ে বর্ধমান থানার পুলিশও অনাময় হাসপাতালে পৌছায় । পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে শিশু চুরির ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।জেলা পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন , ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে । সিসিটিভি ফুটেজে দেখতে পাওয়া যাওয়া ওই মহিলার খোঁজ চালানো হচ্ছে ।
ছবি - সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখছেন ডেপুটি সুপার ডাঃ অমিতাভ সাহা